জাতীয় দল থেকে ফাহামিদুল বাদ : সিন্ডিকেটের ইন্ডিকেট?
ফাহমিদুলকে কেউ খেলতে দেখেনি। কখনো দেশের ফুটবলের স্বাদই পাওয়া হয়নি তার। কোন স্বাদ? ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের তলানীতে থাকা একটি দলের আবার খেলার মান আর শিরোপা জয়ের স্বাদ! তবু ফাহমিদুল ছিলো এক ভিন্ন ধাঁচের কচুরিপানা।
স্বচ্ছ সবুজ, গোড়ায় নিখুঁত সাদা। ভিন্নতা কেবল চলনবলনে। স্রোতের সাথে না হেঁটে ফাহমিদুল হেঁটেছিল স্রোতের বিপরীতে। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার যে সুযোগ তার সামনে এসেছিলো, তা সে লুফে নিতে বিন্দুমাত্র দেরি করে নি। তবে ফাহমিদুল জানতো না সে কোথায় ভুলটা করছে।
নিঃসাড়, ভঙ্গুর একটা জাতির ফুটবলে যেখানে বিশেষ কোনো অর্জন নেই; সেখানে তো হামজার মতো বড় মাপের খেলোয়াড়ো চলে এসেছেন। তাহলে ফাহমিদুলের দোষটা কোথায়? ফাহমিদুলের দোষটা কি বয়সের? অপরিপক্কতার নাকি তালে তাল দিতে না পারার?
১ম প্রেক্টিস ম্যাচে ফাহামিদুল হ্যাট্টিট করেছেন; এটা সবাই জানেন। যেটা জানেন না সেটা হলো- ফাহামিদুল রীতিমতো সবাইকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে। স্পিড, ড্রিবলিং, একুরেসি কিংবা শ্যুটিং স্কিল- একজন পরিপক্ব পেশাদার ফুটবলারের যেসব গুন থাকা দরকার তার সবই আছে ফাহামিদুলের। তবে কি বয়সটাই মুখ্য বিবেচিত হলো?
আর্দা গুলার, লামিন ইয়ামাল, এন্ড্রিক, কোবি মাইনো, ফ্লোরিয়ান উইটজ, জুড বেলিংহাম- এই যে মাত্র কয়েকজনের নাম বললাম, তাদের সবার বয়স কিন্তু ১৮-২২ এর ঘরে। যে বয়সটায় একটা সুযোগ পাওয়ার আক্ষেপ মানুষকে কাঁদিয়ে বেড়ায়, সে বয়সে যারা সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়ে দেখিয়েছে তারা হয়েছে নেইমার, ভিনিসিয়াস কিংবা এমবাপ্পে, মুসিয়ালা। শুধুমাত্র বয়সের দোষ দিয়ে ১৮ বছরের একজন তাগড়া জোয়ানকে যে কিনা আবার এদেশের এভারেজ ৫-৭ জন খেলোয়াড় থেকে শারিরীকভাবে শক্তিশালী; বাদ দিয়ে দিলেন- এটা কি আর সহজে মানা যায়?
ফাহামিদুলকে যেন আমরা এক নিমিষেই হারিয়ে ফেললাম।
আমার খারাপ লাগছে সে মানুষগুলোর জন্য, যারা ফাহামিদুলদের চিনিয়ে দিয়েছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। যারা রাস্তাটা তৈরি করেছিলেন; এইরকম ফাহামিদুলদের মতো আরো অনেকে সে রাস্তায় পা মাড়াবেন বলে। তাদের জন্য এটা একটা দুঃস্বপ্ন। তবে সে দুঃস্বপ্নকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে Bangladeshi Football Ultras আজ যে কাজটি করেছে তা এদেশের জন্য একটা যুগান্তকারী উদাহরণ হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
সিন্ডিকেটের ইন্ডিকেটেই যদি জাতীয় দলের খেলোয়াড় নির্বাচন থেকে শুরু করে ম্যাচের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়- তাহলে একটা ফেডারেশন, ম্যানেজমেন্ট, কোচ এবং তার প্যানেল থাকার মানেই বা কি?
এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলতে আলট্রাস আজ দিনব্যাপী যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রসংশার দাবিদার। কথা কাউকে না কেউকে বলতে হতো; বলা হচ্ছেও। তবে বলার চেয়ে কিছু করে দেখানোর যে সাহস তা আল্ট্রাসরা করে দেখিয়েছে। এতে করে ২ টি জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেলো:
১. বাফুফেতে আগের মতো মামার বাড়ির আবদার কিংবা জবাবদিহিতা ছাড়াই যা ইচ্ছা তা করে ফেলার যে অভ্যাস- সেটি হুমকির মুখে পড়লো।
২. দেশি ফুটবলের প্রতি যে নবজাগরণ তৈরি হয়েছে তা সামাল দেয়া কষ্টের হয়ে যাবে সিন্ডিকেটের। এতোদিন যারা দেশীও খেলার ব্যাপারে তোড়াই কেয়ার করতো তারা আজ রাস্তায় নেমে পড়ছে। কার জন্য? ফাহামিদুলের জন্য? যারা তারা কখনো দেখেনি; যার খেলা সাথে যাদের তাদের কোনো পরিচয় নেই! তাদের এই রাস্তায় নেমে পড়াটা ফাহামিদুলের জন্য ছিল না; বরং ফাহামিদুলের মতো আরোও যারা আগামীতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদের জন্যও ছিলো।
ফাহামিদুলের দল থেকে বাদ পড়ায় যে ভুল মেসেজটা অন্যান্য অনেকের কাছে পৌঁছাবে- সেটি করতে দেয়া যায় না।
সিন্ডিকেটের ইন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলার এখনি সময়। এখন মানে এখন। ফাহামিদুলকে ঘিরে সবার মধ্যে যে আগ্রহ, উৎকন্ঠা আর ভালোবাসার যে গণ জোয়ারের জন্ম নিয়েছে তাতে গা আমাদের ভাসাতেই হবে। না হলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা মানুষগুলোই কেবল হেরে যাবে না; বরং হেরে যাবে আগামীর সম্ভাবনাময় ফুটবল।
No comments