এলিসন নাকি এডারসন?
ব্রাজিল কখনোই গোলকিপার ভিত্তিক দল ছিলোনা। গোলকিপার নির্ভর দল না হলেও যুগে যুগে এই পজিশন নিয়ে কখনোই ভুগতে হয়নি ব্রাজিলকে। গিলমার, মার্কোস, তাফারেল, দিদা, এমারসন, বারবোসা, কাষ্টিলহো, রোজারিও চেনি ছাড়াও অসংখ্য গোলকিপার সময়ে সময়ে ব্রাজিলের গোলপোস্ট নিরাপদে রেখেছেন।
সময় এখন বর্তমানের গোলকিপারদের নিজেদের প্রোভ করার। সময়ের সেরা দুই গোলকিপার এলিসন বেকার ও এডারসন দুজনেই ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলের ফুটবলার। বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচ'কে মধুর সমস্যায় পড়ে যেতে হচ্ছে এলিসন নাকি এডারসন- এই প্রশ্নে! ক্লাব পর্যায়ে তারা দুজনেই অসাধারণ একটা সিজন কাটিয়েছে। এলিসন ক্লাবের হয়ে সিজনের প্রায় অর্ধেক ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছেন। চ্যাম্পিয়নস লীগ সেমিফাইনালে খেলেছে তার দল। অপরদিকে এডারসন ম্যানসিটির হয়ে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগ শিরোপা। পুরোটা সিজন অপ্রতিরোধ্য থেকেছেন। আজ এই দুই গোলকিপার সম্পর্কে কিছু লিখতে চাচ্ছি।
ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ১৪ অক্টোবর ২০১৫ সালে কোচ কার্লোস দুঙ্গার অধীনে মাত্র ২৩ বছর বয়সে অভিষেক হয় এলিসন বেকার এর। এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের জার্সিতে ২৪ ম্যাচ খেলেছে এলিসন। একনজরে ব্রাজিলের হয়ে তার পার্ফমেন্স ডাটা দেখে নিই-
★ ম্যাচঃ ২৪
★ গোল হজমঃ ১১
★ ক্লিনশিট ১৫!
২৪ ম্যাচের মধ্যে ১৬ টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলেছে এলিসন, যার মধ্যে ৯ টিতেই ক্লিনশিট রেখেছে সে! আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলেছে ৫ টি, যার সবগুলোতেই ক্লিনশিট রেখেছে সে! অর্থাৎ, ৫ ম্যাচে একটিও গোল হজম করতে হয়নি তাকে।
২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ইন্টারন্যাসিওনালের মেইন টিমে অভিষেক ঘটে এলিসনের। যেখানে এর আগেও ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ডারি কয়েকজন গোলকিপার খেলে গেছেন। তিন বছর ব্রাজিলে খেলার পর ২০১৬ সালের ৬ জুন পাড়ি জমান ইতালিয়ান ক্লাব রোমা'তে। নিজের ২য় সিজনেই রোমার ১ম গোলকিপারের স্থানটা পেয়ে গেছে এলিসন। তার সাথে সাথে ২য় সিজন'টাই ক্যারিয়ারের সেরা সিজন হিসেবে পেতে প্রচণ্ড হার্ডওয়ার্ক করতে হয়েছে তাকে।
২০১৭-১৮ সিজনে বিশ্ববাসী দেখেছে অন্যরকম দাপুটে এক গোলকিপার এলিসন'কে। ইতালিয়ান এএস রোমা ক্লাবের হয়ে ইতালিয়ান লীগ, চ্যাম্পিয়নস লীগ সহ সকল প্রতিযোগিতায় মোট ৪৯ ম্যাচ খেলেছে। এই ৪৯ ম্যাচে গোল কনসিড করেছে ৪৭ টি। আর ক্লিনশিট রেখেছে মোট ২২ টি ম্যাচে!
→ একনজরে দেখে নিই ২০১৭-১৮ সিজনে ইতালীয়ান লীগে এলিসন এর পার্ফমেন্সঃ
★ এলিসন-
ম্যাচঃ ৩৭
মোট সেইভঃ ১২৪!
গোল হজমঃ ৩১
ক্লিনশিটঃ ১৭!
সেইভ সাক্সেস রেইটঃ ৭৯%
পাস একুরেসিঃ ৭৯.৮%
হুস্কোর্ড রেটিংঃ ৭.০৩।
ব্রাজিলের সর্বশেষ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কোচ তিতে এলিসনকে রেখেছেন; এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী এলিসন ই হতে যাচ্ছেন ব্রাজিলের নাম্বার ওয়ান, ফাস্ট চয়েজ গোলকিপার। শর্ট রেঞ্জ শট রুখতে অত্যন্ত পারদর্শী এলিসন। সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ক্লাব ও জাতীয় দলের পার্ফমেন্স অনুযায়ী এলিসন বর্তমান ব্রাজিল তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলকিপারদের একজন। ২০১৮ বিশ্বকাপ দলে এলিসন এর ভুমিকা হবে নায়কের।
গোলকিপিং এ সম্ভাবনাময় আরেক নাম 'এডারসন সান্টানা মোরাইজ'। বেনিফিকা থেকে ইংলিশ ক্লাব ম্যাঞ্চেষ্টার সিটি'তে আসা এ তরুন গোলকিপার দুর্দান্ত একটি সিজন পার করেছেন। প্রিমিয়ার লীগে ১৭ ম্যাচে ক্লিনশিট রেখে নিজের যোগ্যতার জানান দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লীগের মতো আসরে ৯ ম্যাচের ৪ টিতেই ক্লিনশিট রেখেছেন এডারসন। সব মিলিয়ে এই সিজনে ৪৫ ম্যাচে ২১ ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছে সে।
ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে ১৭ অক্টোবর ২০১৭ সালে, কোচ টিটের অধীনে। মূলত, এলিসন এর ব্যাকাপ হিসেবেই জাতীয় দলে আছেন এডারসন। কিন্তু, ক্লাব পার্ফমেন্স বিবেচনা করলে এলিসনের চেয়ে খুব কম যান না এডারসন।
→ একনজরে দেখে নিন ২০১৭-১৮ সিজনে ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগে এডারসর এর পার্ফমেন্স ডাটা-
★ এডারসন-
ম্যাচঃ ৩৭
মোট সেইভঃ ৭০!
গোল হজমঃ ২৬
ক্লিনশিটঃ ১৮!
সেইভ সাক্সেস রেইটঃ ৭৪.৫%
পাস একুরেসিঃ ৮৬.৩%
হুস্কোর্ড রেটিংঃ ৬.৮০।
জাতীয় দলে এডারসন এখনো এলিসনের জায়গা নিতে পারেনি। কিন্তু ২০১৭-১৮ সিজনে ম্যানসিটির হয়ে তার পার্ফমেন্স ছিলো দেখার মতো। বর্তমান সময়ের সেরা ৫-১০ গোলকিপারের শর্ট লিস্ট করলে সেখানে অবশ্যই জায়গা পাবে এডারসন। একজন গোলকিপার হওয়া স্বত্ত্বেও শর্ট পাসে অত্যন্ত পারদর্শী এডারসন। সুইপার গোলকিপারের ভুমিকায় থাকে দেখা যায়। আমার মতে, একজন ক্ষিপ্রগতির গোলকিপার হিসেবে এডারসনের রেটিং হবে নাইন আউট অফ টেন।
বিশ্বকাপের জন্যে দুজন ই পার্ফেক্ট এবং দুজন ই জায়গা দখল করার জন্য যুদ্ধ করবে। কিন্তু এটা বলাই বাহুল্য যে এলিসন ইতিমধ্যে ই নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। এডারসন যদি সুযোগ পায়; তাহলে যেন নিজের সেরা'টা দিয়ে খেলে।
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
No comments