গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফুটবল খেলা দেখতে বসলে যা হয়....
গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফুটবল খেলা দেখতে বসা মানেই একটা পেইন। আপনার মাথা নস্ট করে দিবে আবোল-তাবোল প্রশ্ন করে। 'গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফুটবল দেখতে বসলে যা হয়'- এর ১ম পর্ব লিখতে বসেছি আপনাদের জন্যে।
গার্লফ্রেন্ডঃ আরে! তুমি জার্সি পরে বসে আছো? যাবা না আন্টির বাসায়?
আমিঃ আমি কোথাও যাচ্চিনা, বিগ ম্যাচ আছে। চেলসি- লিভারপুল।
গার্লফ্রেন্ডঃ ওকে ফাইন, আমিও খেলা দেখবো।
আমিঃ (মনে মনে বল্লাম খাইছে আমারে) আচ্চা ঠিকাছে দেখো, কিন্তু কোনো কথা বলবা না। ওকে? বিগ ম্যাচ কিন্তু।
গার্লফ্রেন্ডঃ আচ্চা যাও ঠিকাছে।
এর কিছুক্ষণ পর.....
গার্লফ্রেন্ডঃ ও মা! এটা মাঠে কেন?
আমিঃ কেন? ও তো চেলসির প্লেয়ার।
গার্লফ্রেন্ডঃ কিন্তু ওর জার্সিতে 'Hazard' লিখা কেন?
আমিঃ আজব! ওর নামই তো হ্যাজার্ড! ইডেন হ্যাজার্ড।
গার্লফ্রেন্ডঃ 'Hazard' মানে তো বিপদজনক। আমি ক্যামেস্ট্রি বইতে পড়েছি।
আমিঃ স্ট্রাইকাররা তো বিপদজনক হবেই!
অতঃপর কিছু সময়ের জন্যে নিস্তব্ধতা!
গার্লফ্রেন্ডঃ আচ্চা ওর জার্সির পিছনে 10 লেখা কেন? কি বুঝাচ্চে এতে?
আমিঃ এতে বুঝাচ্ছে সে আক্রমনভাগের প্লেয়ার। স্ট্রাইকার/ফরোয়ার্ডদের জার্সি নাম্বার এরকম থাকে।
গার্লফ্রেন্ডঃ তাহলে তো দলের সব স্ট্রাইকারদের জার্সি নাম্বার ১০ তাই না?
আমিঃ না, এটা মাত্র ১ জনকেই দেয়া হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারকে।
গার্লফ্রেন্ডঃ হুম বুঝলাম। আচ্চা ওই প্লেয়ারটা কি গুন্ডা টাইপের কেউ? শুধু মারামারি করে কেন?
আমিঃ ডিয়াগো কস্তা? হা হা হা.. না গুন্ডা কেউ না, তবে মারামারি করে ঠিক।
গার্লফ্রেন্ডঃ মালিক কিছু বলেনা?
আমিঃ ফুটবল ক্লাবের মালিকরা কেউ না, এসব দেখার দায়িত্ব তাদের না।
গার্লফ্রেন্ডঃ ওও বুঝছি। ( কি বুঝলো আল্লাহ ঈ জানে! কিন্তু চুপ) একটু পরে.....
গার্লফ্রেন্ডঃ আচ্চা ওই লোকটা এমন চিল্লাচিল্লি করছে কেন?
আমিঃ কে চিল্লাচিল্লি করছে!
গার্লফ্রেন্ডঃ ওই যে চশমা পরা ভদ্রলোকটা, উনি কে?
আমিঃ জার্গেইন ক্লপ। লিভারপুলের ম্যানেজার। আর উনি চিল্লাচিল্লি করছেন না, দলের প্লেয়ারকে কমান্ড দিচ্চেন।
গার্লফ্রেন্ডঃ ধুর! এটা কিভাবে সম্ভব? আমিতো তাকে আগেও দেখছি বোধহয়!
আমিঃ (অবাক হয়ে) তুমি আবার তাকে কই দেখলা?
গার্লফ্রেন্ডঃ দেখেছি দেখেছি, ওই যে গতবছর তোমার বাসায় খেলা দেখতে এসে দেখলাম।
আমিঃ তাই নাকি? o.O
গার্লফ্রেন্ডঃ হ্যা বাবা, উনিই তো ছিলেন। তা এখন উনি এখানে কি করছেন?
আমিঃ আচ্চা তুমি তাকেই দেখেছিলা?
গার্লফ্রেন্ডঃ হ্যা তাকেই দেখছি। হলুদ- সাদা জার্সির একটা দলের সাথে।
আমিঃ ও বুঝছি, উনি তখন বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবের কোচ ছিলেন। এখন লিভারপুলের কোচ।
গার্লফ্রেন্ডঃ কিন্তু তুমি না বল্লা উনি লিভারপুলের ম্যানেজার?
আমিঃ (রাগী গলায়) কোচ আর ম্যানেজার একই কথা।
এরমধ্যেই ফ্রি-কিক থেকে ডাইরেক্ট গোল দিয়েছে চেলসির উইলিয়ান..... :-D :-D :-D
আমিঃ ইয়েসসসসসসসসসসস! ইয়াহুউউউ!
গার্লফ্রেন্ডঃ কি হইলো, চিল্লাচ্চো কেন?
আমিঃ আরে চেলসি গোল দিয়েছে। উইলিয়ান....
গার্লফ্রেন্ডঃ এটা গোল হলো কিভাবে? গোলকিপার তো বল ধরেনি।
আমিঃ ধরেনি মানে কি?
গার্লফ্রেন্ডঃ তুমিই না বলছিলা গোলকিপার বল হাত দিয়ে ধরতে পারে? কিন্তু এখন তো গোলকিপার বল ধরেনি!
আমিঃ আরে বাবা! গোলকিপার বল হাত দিয়ে ধরতে পারে ঠিকই, ওটা ফ্রি-কিক থেকে ডাইরেক্ট গোল ছিলো। গোলকিপারের ধরার কোনো সুযোগ ছিলোনা!
গার্লফ্রেন্ডঃ ও আচ্চা। শোন এটা কে?
আমিঃ ফিলিপে কৌটিনিয়ো। ব্রাজিলিয়ান প্লেয়ার।
গার্লফ্রেন্ডঃ ও কিন্তু অনেক কিউট। তাই না? আমি তার খেলা অনেক ভালোবাসি! o.O
আমিঃ ( উত্তর দিলাম না)
একটু পরে হেড করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলো এডাম লাল্লানা ও সেস্ক ফ্যাব্রিগাস। দুজনেই মাঠে পড়ে আছে....
গার্লফ্রেন্ডঃ এই দেখলে? ওরা মাঠিতে গড়াগড়ি খাচ্চে কেন?
আমিঃ (প্রচন্ড রাগ উঠছে) গড়াগড়ি খাচ্চে না, এরা ইঞ্জুরড হয়েছে।
গার্লফ্রেন্ডঃ ও, তাহলে কি তারা আর ম্যাচ খেলতে পারবেনা?
আমিঃ হয়ত পারবে, ইঞ্জুরি বেশি না। ম্যাজিক স্প্রে করলেই সেরে যাবার কথা।
গার্লফ্রেন্ডঃ লাল দলটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপ জিতবে!
আমিঃ লিভারপুল? ওয়ার্ল্ড কাপ?
গার্লফ্রেন্ডঃ হ্যা, কেন? লিভারপুল বিশ্বকাপ খেলেনা?
আমিঃ না। লিভারপুল একটা ক্লাব। তারা কোনো দেশ নয়।
গার্লফ্রেন্ডঃ ও বুঝছি। আচ্চা, ট্রাউজার পরা ওই বুড়ো লোকটা কে? এমন গম্ভীর হয়ে বসে আছে!
আমিঃ এটা গোচ হিডিংস। চেলসির কোচ।
গার্লফ্রেন্ডঃ আল্লাহ না, চেলসির কোচ তো অন্য আরেকজন। কোট টাই পরেন। পাগলা টাইপের!
আমিঃ মৌরিনহোর কথা বলছো? উনি এখন কোচ না, স্যাকড।
গার্লফ্রেন্ডঃ তাই বলে এই বুড়ো লোকটা কোচ হয়ে যাবে কেন?
আমিঃ চেলসির মালিক তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এজন্যে।
গার্লফ্রেন্ডঃ তুমি না বল্লা ক্লাবের মালিক কেউ না?
আমিঃ মালিক কোচ বদলানোর ব্যাপারে ডিশিশন দেন। বুঝলা?
গার্লফ্রেন্ডঃ এমন রাগ করছো কেন?
আমিঃ না রাগ করছিনা।
গার্লফ্রেন্ডঃ খেলা আর কতক্ষণ বাকি?
আমিঃ ২৮ মিনিট... ৯০ মিনিটের খেলা।
গার্লফ্রেন্ডঃ আচ্চা, ম্যাচ ৯০ মিনিট কেন? ১০০ মিনিট বা ৮০ মিনিট হলে কি হতো?
অতঃপর.............
অতঃপর আর কোনো কাহিনি নাই। আমি টিভি অফ করে দিলাম। টিভির ডিসপ্লে মুহুর্তেই কালো হয়ে এলো! আবারো নিস্তব্ধতা .....
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
No comments